
উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের নানা জটিলতা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ যত বেশি মাত্রায় হবে এবং যত বেশিদিন যাবত রোগী ভুগবে তত বেশি চোখের জটিলতা হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
উচ্চ রক্তচাপের প্রথম দিকে রোগীর চোখে কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে। চিকিৎসকরাই প্রথমে চোখের ভিতরের জটিলতা গুলো নির্ণয় করে থাকেন। তবে অল্প বয়সের রোগীদের যদি অনেক বেশি রক্তচাপ হয়ে যায় তবে দৃষ্টি কমে যাবার মত নানা সমস্যা হতে পারে। চোখের রেটিনাতে পানি জমে যাওয়া, অপটিক স্নায়ুতে পানি জমে যাওয়া, রেটিনায় রক্তক্ষরণ, রেটিনার রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া বা রেটিনার স্তর আলাদা হওয়া অর্থাৎ ডিটাচমেন্টের মতো জটিলতা হতে পারে। গর্ভবর্তী মায়েদের একলামসিয়া হলে, রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেলে এ সমস্যাগুলি বেশি দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চোখের চাপও অনেক সময় বেড়ে যায় এবং চোখের অপটিক নার্ভের ক্ষতি করে, দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় গ্লকোমা। এজন্যে উচ্চ রক্তচাপ অনেক দিন থাকলে এক ধরনের গ্লকোমা (অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমা)-এর হার স্বাভাবিক রক্তচাপের মানুষদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দেখা যায়।
অনেক বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চোখের রেটিনাতেই নানা পরিবর্তন দেখা যায় যাকে বলা হয় হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি। প্রথমেই রেটিনার রক্তনালী গুলি সরু হতে থাকে, প্রাথমিক পরিবর্তন হয়, কোন কোন রক্তনালী মেটে রঙের এবং সাদা রঙের হতে পারে, যাকে বলা হয় কপার অয়ারিং এবং সিলভার অয়ারিং। এ সময় রেটিনার রক্তনালী (ধমনি বা শিরা) বন্ধ হতে পারে। কোন কোন রক্ত নালীর দেয়ালের পরিবর্তন হয়ে ফুলে যায়, ব্লাড রেটিনাল ব্যরিয়ার নষ্ট হয়ে যায় এবং রক্তনালী থেকে পানি, রক্তকণিকা, লিপিড ইত্যাদি চোখের ভেতরে রেটিনার সামনে চলে আসে। এ সকল অবস্থাকেই বলা হয় চোখের রেটিনার ইডিমা, হেমোরেজ, এগজুডেট ইত্যাদি। সকল উপসর্গকে একত্রে বলা হয় হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি। হাইপারটেনশনের মাত্রা এবং মেয়াদ বেশি হলে হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি-এর মাত্রাও বেশি হতে পারে। এক ধরনের উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় ম্যালিগনেন্ট হাইপারটেনশন। এখানে ডায়াস্টলিক রক্তচাপ অনেক বেশি হয় এবং চোখের অপটিক নার্ভে পানি জমে ডিস্ক ইডিমা তৈরি করে, রেটিনায় পানি জমে এগজুডেটিভ রেটিনাল ডিটাচমেন্ট তৈরি করতে পারে। অপটিক নার্ভের রক্ত সরবরাহ কমে এনটেরিয়র ইসকেমিক অপটিক নিউরোপ্যাথি নামক সমস্যা হতে পারে। এ সমস্ত জটিলতা হলে চোখের দেখা অনেক কমে যায় এবং জরুরীভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের জটিলতার চিকিৎসা করতে হবে। তা না হলে অপটিক স্নায়ু শুকিয়ে স্থায়ীভাবে অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে।
চিকিৎসা :
হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথির মূল চিকিৎসা রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত রাখা, তবে চোখের জটিলতা হয়ে গেলে চোখের রঙিন ছবি, ফ্লুরেসিন এনজিওগ্রাফি, ওসিটি ইত্যাদি পরীক্ষা করে, সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রেটিনায় লেজার চিকিৎসা করলে দৃষ্টির উন্নতি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, কিডনির সমস্যা, রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে তাও একই সাথে চিকিৎসা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. এম. নজরুল ইসলাম
ফ্যাকো ও গ্লকোমা বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ আই হসপিটাল, ঢাকা।
